Wednesday, June 25, 2025

Decision to quickly implement the recommendations of the Public Administration Reform Commission

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্ন্তবর্তী সরকার। শুক্রবার (২০ জুন) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান ৬টি কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করে সেসব কমিশন সরকারের নিকট সংস্কার প্রস্তাব দাখিল করেছে।

এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ও বড় সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। তবে, যে সকল সংস্কার প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৫ মে ২০২৫ তারিখে এ সংক্রান্ত একটি পত্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে প্রেরণ করেছে।

সভায় জানানো হয়, ৫টি সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য মোট ১২১টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩৮টি, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের ৪৩টি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সংস্কার প্রস্তাব আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।

১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব। এই ১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে আটটি অপেক্ষাকৃত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এগুলো হলো: (১) মহাসড়কের পেট্রোল-পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সংক্রান্ত, (২) মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা, (৩) কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, (৪) কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা, (৫) গণশুনানি, (৬) তথ্য অধিকার আইন, (৭) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন এবং (৮) ডিজিটাল রূপান্তর এবং ই-সেবা।

আলোচনার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়:
১. মহাসড়কের পেট্রোল-পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ:
* জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি মালিক সমিতির সাথে বৈঠক করে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের বিষয়ে মতবিনিময় করে ২০ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে দেশের সকল পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
* জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে এবং জেলা প্রশাসনকে বাস্তবায়ন তদারকির অনুরোধ জানাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করবে। জেলা প্রশাসন নিয়মিত পরিদর্শন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে অবহিত করবে।
২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা:
* তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সকল মন্ত্রণালয়ের সাথে সভা করে ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য আপলোড এবং নাগরিকদের মতামত প্রদানের অপশন রাখার বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেবে।
* National data governance interoperability-এর কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
৩. সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন:
* মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২ দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে।
* জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ভেটিং সম্পন্ন করে তা ফেরত পাঠাবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তা জারি করবে।
* নীতিমালা জারির এক মাসের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৪. বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা:
* স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার সাথে এক সপ্তাহের মধ্যে সভা করে কমিউনিটি স্বাস্থ্য পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ করবে।
৫. সকল সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি নিশ্চিত করা:
* মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সকল সেবা প্রদানকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে বৈঠক করে গণশুনানির কৌশল ঠিক করে দেবে।
৬. তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এবং Official Secrets Act, 1923 পর্যালোচনা ও সংশোধন:
* মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ Official Secrets Act, 1923 পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
* তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’ হিসাবে রূপান্তর করা:
* বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চলমান সংস্কার কার্যক্রমের সাথে কমিশনের সুপারিশ সমন্বয় করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন করতে হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ বিষয়ে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
৮. ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করা এবং ই-গভর্নমেন্ট ও ই-সার্ভিস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ:
* তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বর্তমান সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত নাগরিক প্লাটফরমে সরকারের সকল সেবা অন্তর্ভুক্ত করার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
* National data governance interoperability system দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
* আগামী এক মাসের মধ্যে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ তাদের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে অবহিত করবে।

সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে এবং সময়াবদ্ধ কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ)-এর আওতায় একটি তদারকি টিম থাকবে, যা মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়াও, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে নিয়মিত এই ধরনের সভা আয়োজন করা হবে।
এছাড়াও বিগত মাসগুলোতে সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় ছোটবড় বহু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। মোট ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

spot_img

More news in this section

spot_img

Latest news